১৬ ফেব্রুয়ারী: গ্রীষ্মকালের দাবদাহ, ভরদুপুর, রাস্তা ঘাটে জনপ্ৰাণী নেই, ধূলধূসরিত খালি পায়ে মাথায় ছাতা, বগলে এক বাণ্ডিল সাপ্তাহিক ‘জঙ্গিপুর সংবাদ নিয়ে তার নিস্তব্ধ পদচারণ। ইংরাজদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্বক, ব্যঙ্গাত্বক, রসাত্বক সব খবরে ঠাসা ‘জঙ্গিপুর সংবাদ’। ইংরেজ পুলিশরা সেই বৃদ্ধ ভদ্রলােকটিকে বার বার হেনস্থা করতাে। তদানিন্তন কলকাতা পৌরনিগমের মেয়র সুভাষ চন্দ্র বােস পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বৃদ্ধ ভদ্রলােকটিকে হকারের লাইসেন্স পাইয়ে দিয়েছিলেন। মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর শহরে নিজেই ছিলেন সাপ্তাহিক ‘জঙ্গিপুর সংবাদ’-এর মালিক, কম্পােজার, প্রুফ রিডার, মেশিনমেন এবং অবশ্যই সম্পাদক। পাশথেকে তাকে সাহায্য করতেন পত্নী প্রভাবতী দেবী। সেইসমাজ সংস্কারক, বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামীদাদা ঠাকুর ওরফে শরৎচন্দ্র পণ্ডিতকে আজ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ভূলেই গেছে। পশ্চিমবাংলার বিশিষ্ট অভিনেতা ছবি বিশ্বাস দাদা ঠাকুরের ভূমিকায় অভিনয় করে জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য, পশ্চিমবংগের বাঙালী সমাজ দাদা ঠাকুরকে অবহেলা, অনাদরেই রেখে দিলেন কোনাে পুরষ্কার দিলেননা।
দাদা ঠাকুরের পাশে বসা বাঁদিকে কন্যা কণিকা
বিদুষক, বােতল পূরাণ, টাকার অস্টতর শতনাম, ভােটামৃত প্রভৃতি ব্যংগ রসাত্বক গ্রন্থ লিখে দাদা ঠাকুর ইংরেজদের বিরুদ্ধে জাগরণ তুলেছিলেন। সেই দাদা ঠাকুরের সাধের জঙ্গিপুর সংবাদ’ একশত বছর পূর্ণ করেই বন্ধ হয়ে গেছে। রঘুনাথগঞ্জ শহরের মাঝখানে দাদা ঠাকুরের এক প্রতিমূর্তি ছাড়া সব স্মৃতি আজ অতীত, দাদা ঠাকুরের পরিবারের শেষ সন্তান কণিকা রায়ও প্রায় ৯০ বয়সে গত শিৱরাত্রির দিন চলে গেলেন। ২২ দিন আগে তার জ্যোষ্ঠ পুত্ৰ পুলক রায় মারা গেছেন। কণিকা দেবীর স্বামীদেবনাথ রায় আগেই মারা যান। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দী শহরের শিবরামবাটি এলাকায় তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তাদের চার পুত্রের, একজন কাশীনাথ রায় আজ মায়ের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে বলেন, মা ভালাে কবিতা লিখতেন শেষ দিন পর্যন্ত দাদু দাদা ঠাকুরের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে ছিলেন। মুর্শিদাবাদ জেলার গর্ব দাদা ঠাকুরকে আজ আর কেও মনে রাখেনা, পশ্চিবাংলার আত্মকেন্দ্রীক বাঙালীরা তাদের সােণালী অতীত ভুলে কেরিয়ার গড়ার লক্ষ্য নিয়ে উদ্ধঃশ্বাসে দৌড়াচ্ছে কে কাকে টেক্কা দিতে পারে। দাদা ঠাকুরদের মত উজ্জল পুরুষদের স্মৃতি আকড়ে থাকা তাদের কাছে সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। তাই দাদা ঠাকুরের কণিষ্ঠ কন্যা কণিকা দেবীর মৃত্যুর খবর অগােচরেই থেকে গেল। কেউ জানতেই পারলােনা। বাঙালিদের সােণালী অতীত ক্ৰমশঃ বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে।
0 comments: