আজও রহস্যের আবর্তে নেতাজির মৃত্যু (৩)


( খণ্ড : ৩ )

  • অমল গুপ্ত

 …. দ্বিতীয় খন্ডর পর 
এই মহাদেশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, বিপ্লবী সংগ্রামী নেতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্ৰ বসু ‘আজাদ হিন্দ বাহিনী’ গঠন করে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে সংগ্রাম না করলে ভারতের স্বাধীনতা আজও আসতো না। এইরকমই ধারণা পোষণ করেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। এই সেই ব্যক্তিত্বকে যুদ্ধ অপরাধী তকমা সেঁটে চরিত্র হরণ করে দেশের একটি মাত্র পরিবার ইতিহাসকে পাথর চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে গেছে। প্রথম থেকে। বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রায় ৭০ বছর পর অন্ধকারে ধুলিমাখা ৩০৩টি গোপন ফাইল প্রকাশ্যে এনেছেন। ১৯৪৫ সালে যে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি, তার বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। 
১৯৫৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের এক প্রতিনিধি কলকাতায় এসেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন রাজ্যপাল পি, বি, চক্রবর্তী সেই রাজ প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ব্রিটিশরা হঠাৎই দেশ ছাড়লো কেন ? তার জবাবে রাজ প্রতিনিধি লর্ড বলেছিলেন, মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্রিটিশদের কাছে কোনও গুরুত্ব ছিলো না। দুটি কারণে তারা ভারত ছাড়ে। ১ নং কারণ, নেতাজির সুভাষ চন্দ্ৰ বসু এবং ২ নং কারণ আজাদ হিন্দ বাহিনী। এর সঙ্গে ২০ হাজার ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকেও আর এক কারণ বলে উল্লেখ করেছিলেন। 
তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নেহরু ব্রিটিশ রাজকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, ‘নেতাজি যুদ্ধ অপরাধী। তোমাদের শত্রু। তোমাদের মিত্রদেশ রাশিয়া নেতাজিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে কেন?” আজাদ হিন্দ বাহিনীর ট্রাষ্টি কৰ্ণেল জি,ডি, বক্সী অভিযোগ করেন, আজাদ হিন্দ বাহিনীর ৬০হাজার সেনার মধ্যে প্রায় ২০ হাজার দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। স্বাধীন ভারতে প্ৰাণ আহুতি দেওয়া ২০ হাজার সেনাকে অবসরকালীন কোনও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি। অথচ পাকিস্তান আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রাক্তন সেনাদের অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে। 
বিভিন্ন তথ্যে প্রকাশ পেয়েছে, বাঙালির নেতা নেতাজি সুভাষকে পশ্চিম বাংলার মানুষ ভালো চােখে দেখেনি। দীর্ঘ ৩৪ বছর বামপন্থী রাজত্বের ফলে নেতাজিকে নানা সমালোচনা করা হয়েছিল। পর অবশ্য বামপন্থীরা নেতাজিকে মিত্র বলে গ্রহণ করেন। ভারতের বাইরেও নেতাজির প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা পোষণ করা হয়। 
আমাদের এই অসমে নেতাজির এক বিশেষ অবদান আছে। অসমের ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্ৰ বসু বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি থাকার সময় নেতাজি শিলঙে এসে লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ, দেবেশ্বর শর্মা, তরুণরাম ফুকন, মহম্মদ তৈয়াবুল্লা প্রমুখদের সহযোগিতা নিয়ে স্যার সাদুল্লা নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ সরকারের ভাঙোন ধরিয়ে গোপীনাথ বরদলৈর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার গঠন করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের হাত থেকে অসমকে রক্ষা করেছিলেন। কারণ নেতাজি বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সাদুল্লা সরকারের এক গোপন বুঝা-বুঝি হয়েছে। অসমকে পাকিস্তানের সঙ্গে সামিল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে নেতাজি চারজন বিধায়ককে কংগ্রেস দলে নিয়ে এসে নিজ দলের সরকার গঠন করেন। 


তখনকার মতো অসম রক্ষা পেলেও পর অৱশ্য পুনরায় নেহরুর ইচ্ছাই সাদুল্লা সরকার স্বল্প সময়ের জন্যে ক্ষমতায় বসে। ইতিহাসই বলছে, নেতাজি অসমকে পূর্ব পাকিস্তানের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। আজ অসমের মানুষ নেতাজির কথা মনে রাখে না। বাঙালিদের বড় দুঃসময় চলছে। নেতাজির দল ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ পশ্চিমবঙ্গের মমতা নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজি কেন্দ্রীয় ছুটীর দিন হিসেবেও ঘোষণা করার জন্য দাবিও জানানো হয়েছে। 
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রকাশ্যে আনা ফাইলের অন্তর্ধান রহস্য আজও পুরোটা কিনারা হয়নি। তবে বিভিন্ন নথি-পত্রে প্রমাণিত হয়েছে, ১৯৪৫ সালে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি। ফৈজাবাদের গুমনামি বাবা নেতাজির ছদ্মবেশে ছিলেন কি না, তাও আজ ধোঁয়াশায়। তবে সবকিছুর উর্ধে দেশের একটি মাত্র পরিবার, দিল্লীর গদি রক্ষার তাগিদে জঘন্যতম দেশবিরোধী চক্রান্তে সামিল হয়েছিল। যদি তাই হয়, দেশবাসী তাদের কোনও দিনই ক্ষমা করবে না।  
ফোন : 9864044239

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: