খণ্ড : ২
- অমল গুপ্ত
১৯৪৫ সালের ১৮ আগষ্ট নেতাজির বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দাখিল করায় খোসলা এবং শাহনওয়াজ কমিশনের সদস্যদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়। এই দুই কমিশন প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছিল, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে। কমিশনের প্রধান শাহনওয়াজকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় মন্ত্রীত্বের সুযোগ দিয়েছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নেহরু। শাহনওয়াজ কংগ্রেস পরিবারেরই সদস্য ছিলেন। অপরদিকে খোসলা কমিশন একই রায় দেওয়ার পরই তাকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী লেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আই এন এ ষ্ট্ৰাষ্টি কর্ণেল জি ডি বক্সী জোর গলায় দাবি করেছিলেন, আজও দাবি করছেন, ‘সোভিয়েত রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জেলে আটকে রেখে ব্ৰিটিশ পুলিশ নেতাজি সুভাষ চন্দ্ৰের উপর শারিরীক-মানসিকভাবে অত্যাচার করে।”
নেতাজির অন্তর্ধান সম্পৰ্কীয় তৃতীয় কমিশন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশক্রমে বিচারপতি মনােজ মুখার্জিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগষ্টের দিনে তাইহকুতে কোনও বিমান দুর্ঘটনাই হয়নি। এই কমিশনকে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সহযোগিতা করেননি। ডি এন এ টেষ্টের দাবি তুলেছিল এই কমিশন। তা গ্রাহ্য হয়নি। সংসদে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাটিল মনোজ মুখার্জি কমিশনকে গুরুত্বহীন করে বলেছিলেন, এক গুচ্ছের অর্থব্যয় করে কমিশন গঠনের কোনও মানে হয় না। সাংসদ চন্দন মিত্র, সাংসদ মুরলী মনোহর যোশী তীব্র প্রতিবাদ করে জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির তথাকথিত ভষ্মের ডি এন এ টেষ্টের দাবি তুলেছিলেন। ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে আজাদ-হিন্দ বাহিনী গঠনের সময় নেতাজি যখন উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান— “আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদেরকে স্বাধীনতা দেবো’। তখন দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলির মানুষ নেতাজিকে দেশের জন্যে যুদ্ধ করার জন্য কোটি কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার এবং অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। প্রায় ৪২ টি বাক্স ভর্তি স্বর্ণালঙ্কার ও কোটি কোটি টাকা লুট হয়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছিল, তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশক্রমে মাউন্ট ব্যাটেন, লেফটনেন্ট আইয়ারের সঙ্গে যোগসাজেশ করে সব সম্পত্তি ব্রিটেনে নিয়ে গিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়। দেশের জন্য সংগৃহীত ‘খাজানা” এইভাবেই লুট হয়। বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মোদী সুইজারল্যান্ডের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত নেতাজির খাজানা উদ্ধারে বিশেষ কমিশন বসানো। উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার এক আশ্রমে গুমনামি বাবা নামে এক ফকিরকে নেতাজি বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। তিনি নিয়মিত দেশ-বিদেশের খবর রাখতেন। তার বালিশের তলায় থাকতো দুটি ধৰ্মগ্ৰন্থ৷ কোরাণ ও গীতা। তার হাতের লেখা নেতাজির মতই ছিল। তার মুখের আদলও ছিল নেতাজির মতো। সুফি সাধক হিসেবে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। এলাহবাদ হাইকোর্ট এক রায় দিয়ে গুমনামি বাবার সম্পত্তি সংগ্রহ করে এক মিউজিয়াম স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিল।
পশ্চিম বাংলার শৈলমারী সাধুকেও নেতাজি বলে রটনা করা হয়েছিল একসময়। ১৯৬৬ সালে সোভিয়েট রাশিয়ার তাসখন্ডে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী দ্বিপাক্ষীক চুক্তি সম্পাদন করার সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আয়ুব খানের পাশে নেতাজিকে দেখা গিয়েছিল বলে খবর বেরিয়েছিল। এক ছবিও সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ডঃ পূরবী রায় ছিলেন নেতাজি গবেষক। সাংসদ জয়ন্ত রায়ের সঙ্গে তিনিও কয়েক দফা মস্কো গিয়েছিলেন।
সেখানে সোভিয়েত রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগের সদর দপ্তর কেজিবির আর্কাইভসের ক্রিমিনাল বিভাগের বহু নথিপত্র দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন ডঃ পূরবী রায়। তাকে সেইসব গোপন নথি-পত্ৰ সংগ্রহ করা বা ছবি তোলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন, অসমের হােজাই এবং লামডিং-এর নেতাজির জন্ম জয়ন্তী কমিটির অনুষ্ঠানে। লামডিং-এর বিশিষ্ট নেতাজিপ্ৰেমী প্ৰয়াত বিজন সিংহ এবং হােজাই-এর নেতাজিপ্ৰেমী ব্যক্তিত্ব কমল দত্তের আমন্ত্ৰন ক্ৰমে ডঃ পূরবী রায় কয়েক বার হােজাই লামডিং এসেছিলেন। তিনি সেই অনুষ্ঠানগুলিতে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন– “তার দৃঢ় ধারণা হয়েছে। ১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি। সাইবেরিয়ার জেলই ছিল তার শেষ ঠিকানা।”
... পরবর্তী আগামী সংখ্যায়
ফোন : 9864044239
0 comments: