এন আর সি থেকে বাদ পড়বে ৫০লক্ষ সংখ্যালঘু লোকের নাম

  • আতংকগ্ৰস্থ, ভয় পাওয়ার কারণ নেই : কবীন্দ্ৰ পুরকায়স্থ 
  • রাজ্যে বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত করা হচ্ছে : সাধন পুরকায়স্থ  
  •  এন আর সিতে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নাম যদি বাদ দেওয়া হয়, তবে প্রথমে আমার নাম বাদ দিতে হবেঃ বিধায় কমলাক্ষ দে’ পুরকায়স্থ 

গুয়াহাটি : অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)র খসড়া তালিকা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করার জন্য সুপ্রীম কোর্টের কড়া নির্দেশ মেনে রাজ্যে জোর কদমে খসড়া প্রস্তুতের কাজ চলছে। এই তালিকায় কাদের নাম থাকবে বা থাকবে না, তা নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিশেষ করে ভাষিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভয়ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। বরাক উপত্যকার বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল এবং বিজেপি সভাপতি রঞ্জিৎ দাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নাম যাতে বাদ নাযায়, তা সুনিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানে নির্যাতিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষকে এই দেশে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি অবিলম্বে বাস্তবায়িত করার দাবী জানিয়েছেন। 
কেন্দ্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ ‘সংবাদ প্ৰহরী’কে আশ্বাস দিয়ে জানান, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নাম এন আর সির তালিকায় অন্তৰ্ভুক্ত হবেই। বাঙ্গালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর স্বার্থে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যাতে লোকসভায় পাশ হয়, তার জন্য তারা রাজ্যের বিজেপি সভাপতি ৰঞ্জিৎ দাসের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল শীঘ্রই দিল্লীতে গিয়ে তদবির করবে। শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভায় পাশ হওয়ার আগে যাতে অৰ্ডিন্যান্সের মাধ্যমে তা কার্যকরী করা যায়, তার চেষ্টাও করা হবে। তিনি বলেন, এন আর সি তে প্রথম তালিকায় নাম না থাকলেও ভয়ের কিছু নেই। প্রথম তালিকায় যাদের নাম বাদ পড়বে সংশোধনের জন্য ৩-৪বার সময় দেওয়া হবে। 
কিন্তু তার আশ্বাসের বিপরীতে রাজ্যের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি এবং কংগ্রেসের নেতারা এক ভয়ানক ছবি তুলে ধরে অভিযোগ করেছে, রাজ্যে বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত করা হচ্ছে। প্রায় ৫০লক্ষ হিন্দু-মসলিম মানুষের নাম এন আর সি তালিকা থেকে বাদ যাবে। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক প্রধান সাধন পুরকায়স্থ অভিযোগ করেন, শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং অন্যান্যদের সঙ্গে তারা দিল্লীতে রেজিষ্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (আর জে আই)র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখানে আর জে আই স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ৬(এ) নামে নতুন এক বিশেষ ধারা সংযোজন করা হয়েছে। সেই ধারা অনুযায়ী অসমে এন আর সির কাজ চলছে। এন আর সি-র গোপনীয় নির্দেশক্রমে নাম তোলার যোগ্যতা হিসেবে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। প্রথম শর্ত— ১৯৫১ সালের এন আর সিতে নাম থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত— ১৯৭১সালের ২৪মার্চের মধ্য রাত্রি পর্যন্ত যে কোনও ভোটার তালিকায় নাম থাকা আবশ্যক। উল্লিখিত এই দুই শর্ত পূরণ করা ব্যক্তিরা তাদের বংশধরের যোগসূত্র থাকতে হবে। যে সব ব্যক্তির ১৯৬৬ সালের ১জানুয়ারীর পর এবং ১৯৭১ সালের ২৫মার্চের পূর্বে এ রাজ্যে এসেছে, তাদের নাম এন আর সিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে ফরেন রেজিষ্ট্রেশন রিজিওন্যাল অফিসারে (এফ আর আর ও)র কাছে নাম পঞ্জীভুক্ত করতে হবে। এবং কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ দ্বারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশি নয় বলে ঘোষিত হতে হবে। অসমের আদি বাসিন্দাদের ছেলে-মেয়ে, সন্তান-সন্তুতিদের ভারতীয় নাগবিকত্ব পঞ্জীয়ন কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় সন্দেহাতিতভাবে প্রতীয়মান হতে হবে। ডি ভোটার দের নাম এন আর সি তে উঠবে না। তবে বিদেশি ট্রাইবুনালে বিদেশি নয় বলে ঘোষণা করার পর তাদের নাম এন আর সি তে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। 
এই শর্তগুলির কথা উল্লেখ করে বরাক উপত্যকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বাধীকার আন্দােলন নিয়ে সরব নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক প্রধান পুরকায়স্থ আশংকা ব্যক্ত করে বলনে, বরাক ব্ৰহ্মপুত্র মিলিয়ে কম পক্ষে ৫০লক্ষ মানুষের নাম এন আর সি থেকে বাদ পড়বে। বাহ্যিকভাবে রাজ্যে এন আর সি খসড়া তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। তাকে বাহ্যিক নাটক বলে উপহাস করে তিনি বলেন, বিজেপির বাঙ্গালি নেতৃত্ব ছাড়া আসু, অগপ এবং বিজেপির অধিকাংশ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধীতার পথে নেমেছে। বিজেপির বাঙ্গালি নেতৃত্ব যতই দৌড়া-দৌড়ি করুক না কেন নাগরিকত্ব সংশোধনীর বিল কোনো পর্যায়েই পাশ করা সম্ভব হবে না। বরাকের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, শুধু কাছাড় জেলায় ৮,২৭ হাজার নাগরিকের নাম বাদ পড়বে। এবং বৃহত্তর শিলচরের প্রায় ৭০ হাজার লোকের নাম বাদ পড়বে। কাছাড় জেলায় ৪,১১৯,২২১জনের নথি-পত্রে গড়-মিল ধরা পড়েছে। এবং ৪,০৮ হাজার লোকের বংশবৃক্ষের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পঞ্চায়েত সচিবদের ইস্যু করা সাৰ্টিফিকেট সুপ্ৰীম কোর্ট বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়ায় রাজ্যের সংখ্যালঘু মহিলারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক চিত্র খুব ভয়ানক। 
কংগ্রেস দলের বিধায়ক কমলাক্ষ দে’ পুরকায়স্থ একইরকম আশংকা প্রকাশ করে বলেন, বরাক উপত্যকায় সংখ্যালঘু মানুষদের মধ্যে ভয়-ভীতির সঞ্চার হয়েছে। কংগ্রেস দল প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নাম যাতে এন আর সিতে অন্তৰ্ভুক্ত হয়, সে ব্যাপারে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আইনের আশ্রয় নিচ্ছে। কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উপনেতা কমলাক্ষ দে’ পুরকায়স্থ বলেন, প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নাম যদি বাদ দেওয়া হয়, তবে প্রথমে তার নাম এন আর সি থেকে বাদ দিতে হবে। তিনি বলেন, রাজ্যে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সরকার ষড়যন্ত্র করছে।

SHARE THIS

No. 1 Web Media in North-East India. Maintained and Published by Saiyad Bulbul Jamanur Hoque on behalf of Save Media Solution (A unit of SAVE).

0 comments: